শামসুল ইসলাম টুকু (বাংলাদেশ থেকে): শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানে স্বায়ত্ত শাসনের দাবিতে ৬ দফা আন্দোলন করেন। ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেন। অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন । ৭০ সালের নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেন । নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে সেনা সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবিতে আন্দোলন ও আলোচনা চালাতে থাকেন ২৬ মার্চের ক্র্যাকডাউনের আগ পর্যন্ত। তখন পর্যন্ত স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রশ্নই উঠেনি শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে। এটাই হচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব ও আন্দোলনের প্রথম অধ্যায়।
যদি ৭ মার্চের ভাষণকে স্বাধীনতার ডাক বা সমার্থক বলে দাবি করা হয় তাহলে ২৫ মার্চ পর্যন্ত সেনা সরকারের সাথে শেখ মজিবুর রহমান কীসের দাবিতে আলোচনা হয়েছে ? তাজউদ্দিনসহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ২৫ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণার লিখিত বক্তব্য নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে যান তার সই নেবার জন্য। কিন্তু তিনি সই দিতে অস্বীকৃতি জানান পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিচ্ছিন্নতাবাদী ও দেশদ্রোহী চিহ্নিত হবেন বলে। বরং তিনি ২৬ মার্চের কালো রাতে উত্তাল জনতাকে ফেলে দিয়ে সেনাবাহিনীর নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। এরপর স্বাধীনতা যুদ্ধের সাথে শেখ মুজিবুর রহমানের কোনো সম্পর্কই ছিলনা। এটাই হচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব ও আন্দোলনের দ্বিতীয় অধ্যায় ।
অবিভক্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হবার খায়েশ না হওয়ায় শেখ মুজিবুর রহমান উপায়ন্তর না দেখে স্বেচ্ছায় পাক সেনাদের হাতে ধরা দেন।কিছু মানুষ বলেন ২৬ মার্চ গোপন তারবার্তায় স্বাধীনতার ঘোষণা দেন । যা নিয়ে রীতিমতো বিতর্ক আছে। স্বাধীনতার দায়ভার গ্রহণ করেন তাজউদ্দিনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ । তারা ভারতে থেকে ৯ মাসের যুদ্ধ শেষে বহু তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফেরেন । অন্যদিকে পাকিস্তানি সেনা সরকারের নিরাপদ বন্দিত্ব থেকে লন্ডন হয়ে দেশে ফেরেন এবং ক্ষমতা গ্রহণ করেন । এরপর তিনি ৭৩ এর নির্বাচনে কারচুপি করেন হেলিক্যাপ্টরে করে । পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থা না থাকায় রক্ষীবাহিনী গঠন করেন। শুধু তাই নয় রক্ষীবাহিনীর বর্বর আচরণ ,খুন , গুম , ধর্ষণসহ সকল অপকর্মকে জায়েজ করার জন্য বাংলাদেশে প্রথম দায়মুক্তি আইন পাস করেন ৭৪ সালে । দলীয় নেতাকর্মীদের লাইসেন্স পারমিট দিয়ে দুর্নীতি করার অবাধ সুযোগ সৃষ্টি করেন।
মুক্তিযুদ্ধে যার অবদান অনস্বীকার্য সেই তাজউদ্দিনকে মন্ত্রী পদ থেকে অব্যাহতি দেন । তার অব্যবস্থার কারণে ৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ হয় ।পত্র পত্রিকার স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে দিয়ে এক দলীয় শাসন বাকশাল গঠন করেন। এটাই ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব ও আন্দোলনের তৃতীয় অধ্যায় ।
তাই দ্বিতীয় স্বাধীনতার সৈনিক ও নতুন প্রজন্মের কাছে আমার পরামর্শ , ইতিহাস জানো ,অপাত্রে ঘি ঢেলো না, তোতা পাখির মত শেখানো কথা বলোনা । আন্দোলনে পূর্বের গতি বজায় রাখো ।