অহংকার এক ঘাতক ব্যাধি

 

 

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউসুফ আলী: অহংকার এক ভয়ংকর ও প্রাচীন ব্যাধি। একে আরবীতে বলা হয় উম্মুল আমরায বা সকল রোগের মা। এই ব্যাধি শুধু ব্যক্তিকেই ক্ষতিগ্রস্থ করে না; পরিবার ও সমাজকেও করে ধ্বংস। এটি ক্যান্সারের মতো এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এটি শুরু হয় অন্তরে। এরপর এটি প্রকাশিত হয় ব্যক্তিগত আচরণে, যার প্রভাব ক্রমান্বয়ে সংক্রমিত হয় পরিবার এবং সমাজে। সুপ্ত আগুন যেমন শুকনা কাঠকে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়, ঠিক তেমনি এটা মানুষের সমস্ত নেক আমলকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দেয়।  অহংকার এমন মারাত্মক গোনাহ যা মানুষকে জাহান্নাম পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। এক হাদিসে এসেছে,‘যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহঙ্কার রয়েছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না (মুসলিম)।  প্রশ্ন হলো অহংকার কী? সরল উত্তর হচ্ছে, কোনো বিষয়ে নিজেকে বড় মনে করে অন্য মানুষকে তুচ্ছ মনে করার নামই অহংকার। শক্তিতে, সামর্থ্য, বয়সে, অভিজ্ঞতায় ত্রিশ বছরের যুবক যতটা সমৃদ্ধ, আট বছরের একটি ছেলে তো সবক্ষেত্রেই তার তুলনায় পিছিয়ে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। বাস্তবেই যে ছোট তাকে ছোট গণ্য করা অহংকার নয়। বরং অহংকার হচ্ছে, সে ছোট বলে তাকে তুচ্ছ জ্ঞান করা; আর নিজের শক্তি, সামর্থ্য, বয়স, জ্ঞান, অভিজ্ঞতাকে নিজস্ব অর্জন মনে করে নিজের ভিতরে এক দাম্ভিকতার ভাব তৈরি করা। নিজেকে অন্যদের থেকে শ্রেষ্ট বা সুপেরিওর ভাবা। এই সুপেরিওরিটির মানুষকতা ও দাম্ভিকতা থেকেই অহংকারের সূত্রপাত হয়।

অহংকার হচ্ছে সকল পাপের মূল। বরং বলা যায়, এ জগতের প্রথম পাপই হচ্ছে অহংকার। এটি এমন এক ব্যাধি যা ইবলিশকে শয়তানে পরিণত করেছিল। আমরা সকলেই জানি পৃথিবীর প্রথম মানুষ হলেন, হয়রত আদম আলাইহিস-সালাম। মহান আল্লাহপাক আদম আলাইহিস-সালামকে সৃষ্টির পর উপস্থিত সবাইকে সম্মানের সিজদা করতে বললেন। উপস্থিত সকল ফিরিশতারা তাকে সেজদা করলো। শুধুমাত্র ইবলিশ সেজদা করল না। সে অহংকার করল। আল্লাহপাক তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কেন সেজদা করলে না? সেএই যুক্ত দেখালো যে, আমি আগুনের তৈরি আর আদম মাটির তৈরি। অর্থাৎ  তার মনের মধ্যে সুপেরিওরিটির মানুষকতা ও দাম্ভিকতার ভাব তৈরি হলো যে, আগুনের শক্তি ও মর্যাদা মাটির চেয়ে বেশী। এভাবেই সে অহংকার করে বসলো। পরিণত হলো শয়তানে।

অহংকার একটি ঘাতক ব্যাধি। ঘাতক ব্যাধি বলছি এই কারণে  যে, তা মানুষের অন্তর্জগৎকে তিলে তিলে শেষ করে দেয়। আল্লাহপাক এরশাদ করেন, পৃথিবীতে যারা অন্যায়ভাবে অহংকার প্রকাশ করে তাদেরকে অবশ্যই আমি আমার নিদর্শনাবলি থেকে বিমুখ করে রাখব [সূরা আ‘রাফ: ১৪৬]। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, তোমাদের মাবুদ এক মাবুদ। সুতরাং যারা আখেরাতে ঈমান রাখে না তাদের অন্তরে অবিশ্বাস বদ্ধমূল হয়ে গেছে এবং তারা অহংকারে লিপ্ত। … নিশ্চয়ই তিনি অহংকারীকে পছন্দ করেন না [সূরা নূহ: ২২-২৩]।

অহংকারী ব্যক্তি সবার চোখেই সে ঘৃণিত। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে অহংকার মুক্ত রাখেন এবং আমাদের ভালো আমলগুলোকে কবুল করেন। (লেখক: মৎস্য-বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়; পোস্ট ডক্টরাল ভিজিটিং ফেলো, সিডনি)

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *